সোমবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৩

কাশিমপুরে এ্যাসেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাসেস লিমিটেডের বিরুদ্ধে বনভূমির ১২ শতাংশ জমি দখলের অভিযোগ

আপডেট:

গাজীপুরের কাশিমপুরে সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে গ্যাস কারখানার রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।ঢাকা বন বিভাগের আওতাধীন কালিয়াকৈর রেঞ্জের কাশিমপুর বন বিটের বড় ভবানীপুর এলাকায় এ অপরাধ সংঘটিত হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়,বিট কর্মকর্তার অফিসের নিকটবর্তী এলাকায় জিরানী বাজার রোডে ৮০০গজ সামনে উত্তর পাশে গজারি বনের ভেতর দিয়ে একটি হাঁটাচলার রাস্তা। অল্প এগুতেই চোখে পড়ল স্টিল মিল সংলগ্ন নতুন আরেকটি রাস্তা। বনের মধ্য দিয়ে তৈরি ১০ ফুট প্রস্থের ও অন্তত ২০০ ফুট দৈর্ঘ্যের রাস্তাটিতে বালু ফেলা হয়েছে।


বন দিয়ে মালবাহী গাড়ি চলাচলের রাস্তা
রাস্তার অপর প্রান্তে বালু ফেলে আনুমানিক পাঁচ বিঘা কৃষি জমি ভরাট করা হয়েছে। সেখানে তরল গ্যাস প্রক্রিয়াজাত কারখানা এ্যাসেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাসেস লিমিটেডের ইউনিট-২ স্থাপনের জন্য ফ্যাক্টরির সেট নির্মাণের কাজ চলছে।এমনকি বনের ওপর দিয়ে নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

বিজ্ঞাপন

কারখানাটির পূর্ব পাশ ঘেঁষে সংরক্ষিত গজারি বন ও পশ্চিম পাশ ঘেঁষে আকাশমনি বাগান। উভয় পাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। তবে কোথাও ডিমারকেশনের খুঁটি পাওয়া যায়নি।

বনের জমিতে রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে রাস্তাটি বন্ধ করে গাছের চারা রোপন ও পিলারের খুটি স্হাপন করে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হলেও রাতের আঁধারে গাছের চারা গুলো বিনষ্ট করে জবরদখলে চলে গেছে জমিগুলো।এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ব্যক্তি জানান,বন বিভাগ থেকে রাস্তা বন্ধ করে গাছের চারা রোপন করা হলেও। কিছুদিন যেতে না যেতেই গাছের চারা গুলো সব মেরে ফেলা হয় এবং মাঝে মধ্যেই দেখি রাতের আঁধারে রাস্তা বন্ধ করা পিলারের খুঁটি গুলো সরিয়ে গ্যাস ফ্যাক্টরির ভিতরে গাড়ি চলাচল করে।এগুলো সব লোক দেখানো নাটক কাজ শেষ হলেই পিলারের খুঁটি গুলো যথাস্থানে পুঁতে রাখা হয়।এসব স্থানীয় বিট অফিস সবই জানে।

কারখানার ম্যানেজার পরিচয়ে রেদোয়ান আহমেদ বলেন,মালিকের নাম তার জানা নেই। স্থানীয় আনোয়ার হোসেন মৃধা সব দেখাশোনা করছেন।

জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন মৃধা বলেন, কারখানার মালিক আব্দুল কাদের ও শাহীন। ডিমারকেশনসহ সব করা আছে।রাস্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,জোতের পাশে দিয়ে বনের জমি দিয়েই রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে আর বনের জমি দিয়ে তো অনেক ফ্যাক্টুরির রাস্তা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান,ওই কারখানার কাজ কয়েক মাস ধরে চলছে। বিট অফিসের সাথে মোটা অঙ্কের টাকায় রফাদফা হয়েছে বলে প্রচার রয়েছে।

সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা বনভূমি উচ্ছেদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র পাঠানোর সূত্রে জানা যায়,কাশিমপুর বিটের বড় ভবানীপুর মৌজার সিএস ২২১ও আরএস ৬৫ দাগে বনভূমি উক্ত বনভূমির পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন সিএস ৫৮ ও আরএস ৮৮ জোত ভূমির মালিক এ্যাসেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাসেস লিমিটেড সীমানা প্রাচীর নির্মাণের মাধ্যমে উক্ত বাউন্ডারির ভিতরে ২শতাংশ বনভূমি দখল করে প্রাচীর নির্মাণ করেন।এছাড়াও উক্ত প্রতিষ্ঠান বনভূমির উপর দিয়ে মাটিকেটে/বালি ভরাট করে আরএস ৬৫ দাগের বনভূমির ১০শতাংশ জমি জবরদখল করে আছেন।এবিষয়ে সাবেক কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম দোলন এর সাক্ষরিত একটি পত্র মাধ্যমে উক্ত দখলকৃত বনভূমির জমি উচ্ছেদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ১২ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রিঃ ২২.০১.০০০০.৬১৪.০৮.০০১.২৩.২৬ নং পত্রের মাধ্যমে কতৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি পাঠান।কিন্তু চিঠি পাঠানো হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদের বিষয়ে কোন ব্যবস্হা গ্রহণ করছেন না।আর একারণে জনমতে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

এব্যাপারে কাশিমপুর বিট কর্মকর্তা সোলাইমান হোসেন বলেন,বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হকের সময়ে মালিক ডিমারকেশন করেছেন। ডিমারকেশনে হাঁটাচলার জন্য ওই রাস্তা দেখানো হয়েছে। আর এখন নির্মাণ কাজের জন্য অনাপত্তিপত্র লাগবে না।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন কর্মকর্তা বলেন,বন ঘেঁষে কারখানা স্থাপন করতে হলে বন বিভাগের অনাপত্তিপত্র লাগবে। নিজস্ব বা রেকর্ডের রাস্তা না থাকলে অনাপত্তিপত্র দেওয়ার সুযোগ নেই। হাঁটাচলার রাস্তা আর কারখানার ভারী যানবাহন ও মালামাল পরিবহনের রাস্তা এক কথা নয়।

তিনি আরো বলেন,কারখানাটিকে রাস্তার সুযোগ দেওয়ায় বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের বড় ক্ষতিসাধন হয়েছে।ভবিষ্যতে ক্ষতি আরো বাড়বে।তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত