
ব্যক্তি যখন কোন দলে প্রবেশ করে,তখন কারো না কারো হাত ধরেই প্রবেশ করে আর এদিকে নেতারাও লোক টেনে নেন নিজের মিটিং মিছিল বড় করার উদ্দেশ্য। সে লোকগুলো হোক নিজ দলের কিংবা ভিন্নমতাবলম্বী।এক সময় বহু টাকা পয়সা খরচ করে হঠাৎ নেতা বনে যাওয়া হাইব্রিডরা নিজ স্বার্থে প্যানেল ভারী করার জন্য ব্যস্ত থাকেন৷সেসব কর্মী বা ছোট নেতারা দল না খোঁজে,ভাইয়ের পিছনে লেগে থাকে। তাদের মনের মধ্যে একটা নামই গেঁথে থাকে “বড় ভাই”। বড় ভাই যেদিকে ছোট নেতা বা কর্মীরা সেদিকে।সেটা হোক দলের স্বার্থে কিংবা বিরোধিতায়।
একটি সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছবি দিয়ে পোস্টার বা ফেসটুন করার রীতি থাকলেও সেটা ভেঙে রাজনৈতিক পদ দেয়া ভাইয়ের ছবি বড় করে দিয়ে বানানো হচ্ছে পোস্টার বা ফেসটুন। এটা যেমন একদিকে নিয়মের ব্যত্যয় অন্যদিকে ভাইলীগের প্রতি পূর্ণ সমর্থন। এভাবে দলকে ভেঙে, দলের নাম ব্যবহার করে ভাইলীগ বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে।আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে একেকটি দল। কিছু কিছু দলের অতি উৎসাহী বা ব্যক্তি বাধ্যগত কর্মীরা অহরহ এমনটা করে যাচ্ছে।
কাশিমপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ শুধুমাত্র গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির ছবি দিয়েই ব্যানার ফেস্টুন তৈরী করেন।যেখানে শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি খুবই ছোট। তাছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের ছবিও দেখতে হয় খুব কষ্ট করে।গাজীপুর বাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বড় আকারে সভাপতির ছবি দিয়ে। সাথে নিজের ছবিও। যেখানে সাধারণ সম্পাদকের কোন ছবি নেই।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়টি হলো ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একসাথে মিছিলে উপস্থিত থাকলেও ফেসবুকে শুধু সভাপতির উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে পোস্ট করেন।গত১৫ জুলাই টঙ্গীতে ছাত্রলীগের কর্মীসভায় মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মোস্তাক আহমেদ কাজল
উপস্থিত থাকলেও শুধু সভাপতির উপস্থিতিতেই জনসমুদ্র হয়েছেন বলে তিনি তার ফেসবুকে উল্লেখ করেন। অথচ সে অনুষ্ঠানে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানসহ আরো অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
যা দলকে পাশ কাটিয়ে তৃনমূল থেকে দলের বিভক্তি করে ভাইলীগের প্রতি গুরুত্ব বাড়ানো হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলে ভিড়ানো বা পদে অধিষ্ঠিত করা ভাই ই এখানে সর্বেসর্বা,দল সেখানে ম্লান।তৃণমূল থেকেই একটি সংগঠনের ইউনিট কমিটিকে এভাবে বিভক্ত করা হচ্ছে।প্রতিপক্ষ তৈরী করা হচ্ছে নিজেরাই নিজেদের।এসবের কারণে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের মধ্যে চলে ঠান্ডা লড়াই, কখনো তা প্রকাশ্যে। বিরোধী দলকে মোকাবেলা করা বা নিজ দলের প্রচার করার চেয়ে এসব নেতা কর্মীরা ভাইকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে বেশী।কারণ তাকে পদ দিয়েছে বা দিবে তার অভিভাবকতুল্য খ্যাত বড় ভাই। এখন আর দলের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা নাই,সংগঠনের প্রতি মনযোগ নাই,সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতি দলীয় কৃতজ্ঞতা নাই,সকল কৃতজ্ঞতা পদে বসানো বা পদের লোভ দেখানো বড় ভাই খ্যাত অভিভাবকেরা।এখন আর কোন মিটিং মিছিলে দলীয় প্রধান বা দলের নামে স্লোগান হয় না, স্লোগান হয় পদে বসানো ভাইয়ের নামে।
এবিষয়ে কাশিমপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন,কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে বা কোন সুবিধা গ্রহন করার জন্য এটা করে থাকে। যা ঠিক নয়, ছবি দিলে দু’জনেরই দিতে হবে। এব্যাপারে আমাদের সাধারণ সভায় কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।
সাধারণ সম্পাদক ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর আসাদুজ্জামান তুলা বলেন, ফেস্টুনে ছবি ব্যবহার করলে সংগঠনের দুই নেতার ছবিই ব্যবহার করতে হবে।একজনের ছবি ব্যবহার করা উচিত নয়।
ভাইলীগের বিস্তার কমাতে কাশিমপুর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সায়মন সরকার বলেন, একজনের ছবি ব্যবহার করা দলীয় কোন্দল সৃষ্টি করার শামিল।যা দলের স্বার্থে পরিহার করা উচিত। সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে একজনকে গুরুত্বপূর্ণ বানাই। কিন্তু দলের স্বার্থে দুজনেরই ছবি দেয়া উচিত।