সোমবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৩

খুলনার ডুমুরিয়ায় মণ্ডপে মণ্ডপে মায়ের বিসর্জনের সুর

আপডেট:

সুদীপ্ত মিস্ত্রী ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি।

আজ মঙ্গলবার বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ সাংবাৎসরিক দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটছে। হিন্দু বিশ্বাসমতে, আজ মর্ত ছাড়বেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। ফিরে যাবেন কৈলাসে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ ও কল্যাণ এবং সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নিরন্তর শান্তি ও সম্প্রীতির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ সমাপন ঘটবে শারদীয় পূজার। আজ শুভ বিজয়া। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, শাপলা, শালুক আর বলিদানের মাধ্যমে দেবীর পূজা হবে। তাই ঢাকের বোলে নিনাদিত হচ্ছে ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ ঠাকুর যাবে বিসর্জন’।
বহু মণ্ডপের লাউড স্পিকারে মন্দ্রিত হচ্ছে—‘নবমী নিশি যেন আর না পোহায়, তোকে পাবার ইচ্ছা মাগো কভু না ফুরায়…। হিন্দুদের বিশ্বাসে বোধনে ‘অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে আনন্দময়ী মা উমাদেবীর আগমন ঘটে। টানা পাঁচ দিন মৃন্ময়ী রূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে আজ ফিরে যাবেন কৈলাস পর্বত শিখরে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে।’ ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ’ মন্ত্রোচ্চারণের ভেতর দূর কৈলাস ছেড়ে মা পিতৃগৃহে আসেন ঘোড়ায় চড়ে। আজ বিজয়া দশমীতে এয়োস্ত্রীদের দেবীবরণ ও সিঁদুর খেলার পর বিদায় নেবেন আবারও ঘোটকে। ফল ‘ছত্রভঙ্গ স্তুরঙ্গমে’ অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। রাজায় রাজায় বা রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে যুদ্ধ সূচিত হয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্তরে ধ্বংস ও অস্থিরতা বিরাজ করে। এক কথায় ‘ছত্রভঙ্গম’।
আজ সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে নেমেছে ভক্তদের ঢল। ঢাক আর শঙ্খধ্বনি। টানা মন্ত্র পাঠ। উলুধ্বনি আর অঞ্জলি। সঙ্গে ঢাকের বাদ্য, নাচ, সিঁদুর খেলা। ধান, দুর্বা, মিষ্টি আর আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানালো ভক্তরা। আজ হিন্দুদের অনেকে উপবাস করবেন। একদিকে বিদায়ের সুর। অন্যদিকে উৎসবের আমেজ। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ২১৪ টি বিভিন্ন মণ্ডপে চলবে আবির উৎসব। সকালে দেওয়া হবে দর্পণঘট বিসর্জন।

বিজ্ঞাপন

উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদ এবং ইউনিয়ন সার্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বিজয়া শোভাযাত্রা শেষে উপজেলার বিভিন্ন নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। বিজয়া দশমী উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বঙ্গভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহ আলোকসজ্জিত করা হবে।

এদিকে গতকাল নীলকণ্ঠ, নীল অপরাজিতা ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় নবমী বিহিত পূজা। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেওয়া হয়। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। সকালে নবমী বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পূজা শেষে অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ভোগ আরতি। শেষ বারের মতো ঠাকুর দেখতে মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল ভিড়। বাসাবাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।

বিজ্ঞাপন

গতকাল নবমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল বিদায়ের সুর। নবমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় মহানবমী কল্পারম্ভ বিহিত ও সন্ধিপূজা। নানা আচারের মধ্য দিয়ে মহানবমীর পূজা শেষে ভক্তরা দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেন। সাধারণত মহাষ্টমীর শেষ এবং মহানবমী তিথির সংযুক্ত সময়ে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই সন্ধিক্ষণেই দেবী দুর্গার হাতে অসুর বধ হয়েছিল। আবহাওয়ার প্রতিকূলতা উৎসবে বাদ সাধেনি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে জড়ো হন অগণিত ভক্ত। মন্ত্র আর উলুধ্বনিতে মুখর থাকে মণ্ডপ।

উপজেলার মাদারতলা মন্দিরের আয়োজক কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা বের করা হবে। দেবী দুর্গাসহ অন্যান্য দেব-দেবীকে এ শোভাযাত্রাসহ সদরঘাট নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বিসর্জনের মাধ্যমে তাদের আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপেই বিতরণ করা প্রসাদ। প্রসাদের পাশাপাশি সন্ধ্যায় ছিল আরতি প্রতিযোগিতা। ঢাক ঢোলে আর নৃত্যে মেতে ওঠে মণ্ডপ। ডুমুরিয়া উপজেলা সহ সারা দেশের পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। মাদারতলা সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এছাড়াও কোনোরকম আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরতি থাকা এবং আজ রাত ৯ টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন এবং ভক্তিমূলক সংগীত এর সাথে রাত ১০ ঘটিকায় সাংষ্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত