
সুদীপ্ত মিস্ত্রী ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ৭ নং শোভনা ইউনিয়নের মাদারতলা গ্রামে বাসা বেঁধেছে বিরল প্রজাতির বিভিন্ন পাখি। প্রজাতির মধ্য হচ্ছে, সাদা বক,কুচ বক,পানকৌড়ি,শালিক,ঘুঘু,তাল চড়ুই সহ হরেক রকমের পাখি। আর গ্রামবাসী গভীর মমত্ব দিয়ে আগলে রেখেছে পাখিগুলোকে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে গাছে যেন থোকায় থোকায় ফুটে আছে সাদা ফুল। গ্রামের গোলপাতার বাগানের বড় আকারের গাছগুলো যেন তাদের অভয়ারণ্য। পাখার ঝাপটা আর কিচিরমিচির মাতিয়ে রাখে গ্রামের আকাশ-বাতাস। সকালে সোনালি রোদ আর গোধূলির মৃদু্ আলোয় তাদের অপূর্ব সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।
পাশাপাশি এসব পাখি যেখানে থাকে সেখানে বিরাট কলোনী গড়ে তোলে। একেকটা বড় গাছে ঝাঁক বেঁধে বাস করে তারা। উপযুক্ত আবাসস্থল, আবহাওয়া, পরিমিত খাবারের যোগান আর নিরাপত্তা থাকলে এরা সাধারণত কোন জায়গা থেকে নড়ে না। বড় বড় কেওড়া গাছ,ওড়া গাছ,বাইনগাছ সহ অনন্য গাছে বাসা বাঁধে তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ৭ নং শোভনা ইউনিয়নের মাদারতলা গ্রামের জনাব প্রসেনজিৎ গোলদারের মাছের ঘেরে গোলপাতার বাগানে অর্ধ শতাধিক গাছে এ সকল পাখির স্থায়ী অভয়াশ্রম। প্রতিদিন বিকেলে সহস্র এ সকল পাখি এসে আশ্রয় নেয় গাছগুলোতে। কিচিরমিচির শব্দে পুরো ঘেরের পাড় মুখরিত হয়ে ওঠে। রাতভর চলে তাদের ডানা ঝাপটানো। নির্বিঘ্নে রাত কাটিয়ে ভোর হলেই গ্রামের পার্শ্ববর্তী খাল-বিল আর ফসলের মাঠ থেকে পোকা মাকড় ও মাছ খুঁজতে বের হয় পাখিগুলো। নিরাপদ আশ্রয় আর ভালবাসায় বাসা বেঁধে প্রজনন থেকে শুরু করে ডিম, বাচ্চা, প্রাপ্ত বয়স সব তারা পার করে এখানেই। তাই দিন দিন বাড়ছে এসব পাখির সংখ্যা।
৭ নং শোভনা ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান জনাব সুরন্জিৎ কুমার বৈদ্য বলেন, ঘেরের পাড়ের বড় বড় গাছে বাসা বেঁধে প্রায় এক যুগ ধরে বাস করছে এসব পাখি। নিরাপদ আশ্রয় আর মানুষের ভালবাসায় গ্রামে এখন পাখির সংখ্যা হাজার হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিজেদের জায়গায় গড়ে ওঠা এই পাখি কলোনীর নিরাপত্তা দিচ্ছে গোটা গ্রামের মানুষ। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা দেখতে আসেন এই পাখি কলোনী।
ঘের মালিক, জনাব প্রসেনজিৎ গোলদার, হিমেল গোলদার,রাতুল গোলদার,শুভ্র গোলদার সহ এলাকাবাসী বলেন, সকালে তাদের ঘুম ভাঙে পাখির ডাক আর ডানা ঝাপটানো শব্দে। সাধারণত এ সকল প্রজাতির পাখিগুলোর দেখা খুব কমই মেলে। তাই এ সকল পাখির যত্নসহ সার্বিক বিষয় দেখাশুনা করতে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করে সবাই।
৮ নং ওয়ার্ড সদস্য জনাব মৃণাল কান্তি বলেছেন, পাখিগুলোকে আমরা আগলে রেখেছি। গাছের ফলমূল আর হয় না। ঘেরের মাছ ভাল হয় না, কারণ ঘেরের চারদিকে গাছ-গাছড়ায় জঙ্গল হয়ে গেছে।’
পল্লী শ্রী মহাবিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞানের প্রদর্শক জনাব অজিত কুমার মন্ডল জানান, বিভিন্ন রকমের সহস্র এ পাখি দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। পাখি প্রাকৃতিক সম্পদ, এদের রক্ষা করলে পরিবেশ রক্ষা হবে। এজন্য এদের রক্ষাই প্রশাসনসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
ডুমুরিয়া থানার এ এস আই সরদার রমজান আলী বলেছেন, ‘আমরা এরই মধ্যে এলাকার সচেতন মহলকে অনুরোধ করেছি পাখিগুলোকে যেন কেউ না মারে সেদিকে খেয়াল রাখতে। পাখিগুলো আমাদের দেশের সম্পদ।’
পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে শুধু নিরাপত্তা নয়, পাখি কলোনীর সার্বিক দেখভাল করার প্রতিশ্রুতিও দেন এই কর্মকর্তা।