
মানব জীবন ঘাত-প্রতিঘাত অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ!
লেখক ঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম।
তাং ঃ ১৫.০৬.২০২৩
মানুষের জীবনটা বড়ই কষ্টের! প্রতিমুহূর্ত ঘাত-প্রতিঘাত
নিষ্ঠুরতা, সাথে জড়িত অশ্লীলতা! বাস্তব জীবনটা এমন ই। কেউ উপলব্ধি করে কেউ করে না! কারো বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে কারো বাস্তব ঘটনা পড়াশোনার মাধ্যমে অন্তরে গেথে যায়! এমন লোকদের জীবন ভাসা-ভাসা কৌতুক পূর্ণ থাকে না কারন দুনিয়ার আসল চেহারাটা তার জানা কোন না কোন ভাবে!
কাশ্মীর উপত্যকায় ১৯৭৩ এ জন্ম এক বাঙালি মেয়ে
মাত্র বারো বছরে বিয়ে হয়! ১৩ বছরে সন্তান দান এবং ২০ বছরের ভিতর তিন সন্তান তাকে দিতে হয়! অত্যাচার নির্যাতনে ১৯৯৭ সালে ২৫ বছর বয়সের তরুনী তিন সন্তান নিয়ে দিল্লি গামী ট্রেনে চেপে বসেন!
বিভিন্ন মুসলিম বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করতে থাকেন এবং কেতাদুরস্ত ধর্মীয় পোশাকি লোক ও তার দেহ গিলতে চায়! আবার ও কর্মস্হান পাল্টায়! এমনি একসময় হিন্দু মুসলমান না বেছে একসময় এসে পড়েন
“অধ্যাপক প্রবোধ কুমারের” বাড়ী! প্রবোধ কুমার ছিলেন “মুন্সি প্রেমচাঁদের” নাতি (শ্রদ্ধেয় প্রেম চাঁদ কে নিশ্চয় সবাই চিনতে পারছেন তাই আর চিনালাম না)।
প্রিয় পাঠক, অধ্যাপক পড়ুয়া মানুষ, তাকে তাকে সাজানো সহস্র বই। এই তাক পরিস্কার করার সময় গৃহ পরিচারিকা গোপনে একটা বই চুরি করেন এবং রাতে পড়ে যথা স্হানে রেখে দেন। এটা অধ্যাপক বাবু দেখতে পান। ছয় মাস পর তিনি মাসাধিক সময়ের জন্য বাইরে যান এবং চাকরানি কে একটা ডাইরি, কলম ও “তসলিমা নাসরিনের” একটা বই দিয়ে বলেন,”যা ইচ্ছে লিখো আমি এসে দেখবো”!
ইনি সেই তসলিমা নাসরিন যিনি বাংলাদেশের অশ্লীলতার জন্য ভারতে নির্বাসিত! তসলিমা সম্ভাবত
“আমার মেয়ে বেলা ও লজ্জা বইয়ের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন! তসলিমার সব সব বই আমার সহধর্মিণীর বুক সেলফে সাজানো।
গৃহপরিচারিকা আশ্চর্য হন কি লিখবেন? তিনি ইঙ্গিত বোঝেন এবং তসলিমার ” আমার মেয়ে বেলা” পড়েন মনোযোগ দিয়ে! তিনি অনুপ্রেরণা পান এবং লিখেন নিজের জীবনী —–
তিনি লিখেন, বারোবছর বয়সে বাসর রাতে একজন পুরুষের তার ছোট দেহটায় কি ভাবে হামলে পড়েছিলো, কি ভাবে নাঙা করেছিলো তার শাড়ী পেটিকোট ব্লাউজ
খুলে দূরে ছুড়ে মেরে, কিভাবে জোরজবরদস্তি করে তার অফুটন্ত গোলাপ কুড়িতে হুল ফুটিয়েছিলো, কি ভাবে রক্তাক্ত হয়েছিলো তার ঊরুসন্ধি, কিভাবে বার বার তাকে একই রাতে ধর্ষণ করেছে স্বামী নামক এক পাষান্ড পুরুষ, কিভাবে দলিতমথিত করেছে তার উরোজ দুটো, ব্যথায় ককিয়ে চীৎকার দিয়ে কেঁদে ও ছাড়া পায় নাই! দন্ত বসিয়েছে বক্ষঃস্হলে, ওষ্ঠে আরো অনেক জায়গায়।
লিখলেন, তেরো বছরে সন্তান জন্ম দেয়ার প্রসব ব্যথা ও নিদারুণ কষ্টের কাহিনী, লিখলেন নারী অঙ্গে ক্ষত নিয়ে ও খুশি করতে হয়েছে পতি পরমেশ্বর কে লাঠির আঘাতে প্রতি যামিনী! লিখলেন অসহায় নারীত্ব, আরো অসহায় দরিদ্র পিতার ঘরে জন্ম নেয়া নারীর করুন কাহিনি! তিনি সঙ্গমে অক্ষম হয়ে শ্বাশুড়ি নামক নারীকে বলার পর তাদের অট্টহাসির কথা, তাদের ছেলে Capable মরদ তার আস্ফালনের কথা!
প্রিয় পাঠক, অধ্যাপক বাবু ফিরে এলে তার হাতে দিলেন গৃহকর্মী তার ডাইরি, তিনি অশ্রু সিক্ত হলেন পড়ে।
দিল্লির বাংলা পাবলিশার্সেদের কাছে গেলেন! অশ্লীল বলে কেউ বই ছাপাতে রাজী হলো না। মনে রাখবেন আমরাও ভারতের অংশ ছিলাম, খাসলত একই রকম!
একটা অখ্যাত পাবলিশার্স রাজী হলেন, ছাপালেন, ধন্য ধন্য পড়ে গেলো। ২০০৬ সাল, ঐ বই ভারতের সর্বাধিক বিক্রি হলো। বিভিন্ন রাজ্য তাদের ভাষায় অনুবাদ করে ছাপালো! একুশটা আঞ্চলিক ভাষায় ছাপা হয়েছে এবং তেরোটা বিদেশি ভাষায়! সেই অশ্লীল বলা ভন্ড ধার্মিক পাবলিশার্স রা পুনঃমুদ্রিত করতে চাইলে তা নাকচ করা হলো। তিনি গৃহপরিচারিকা থেকে লেখিকা, আজ ও লিখছেন! সেই পরশপাথর নারীর মুখের বানী হচ্ছে, “১. মানুষ সব পারে, ২. কনজার্ভেটিভনেস সব কিছুর পথে বাঁধা ৩. প্রথমে একটু সিড়ি পেতে কারো সাহায্য লাগে।
তিনি এখন কলকাতায় তিন সন্তান নিয়ে বাস করেন!
পড়ে পাওয়া এই সত্য ঘটনাটা। ধৈর্য নিয়ে পড়বেন যদি আপনার মানসিকতা পঞ্চাশ বছর এগিয়ে আসে, যদি লেখালেখি আপনাকে প্রলুব্ধ করে, আমার শ্রম সার্থক হবে!
ক্যাপশন ঃ
সেই কালজয়ী লেখিকা।
বিনম্র শ্রদ্ধা হে গুনী! তুমি নারী নও ” দেবী”!