শনিবার, অক্টোবর ২৫, ২০২৫

কাজী তানভীর নতুন উপন্যাস ‘মহামায়া রির্টান’

আপডেট:

অস্থির হচ্ছো কেনো। আমিতো তোমাকে স্বপ্ন দেখতে মানা করিনি মহামায়া। তবে আমাদের সাধ্যের মধ্যে স্বপ্ন দেখা ভালো।
-সাধ্যের মধ্যে? মানেটা বুঝিয়ে বলো।
-আচ্ছা, তুমি ক্লাস ওয়ানে যখন পড়তে, তখন তোমাকে যদি ক্লাস নাইনের সিলেবাস দেয়া হতো, ওটার চাপটা নিতে পারতে? পারতে না, কারণ ওই চাপ নিতে হলে তোমাকে আরো আট ক্লাসের সিঁড়ি ডিঙিয়ে আসতে হতো। স্বপ্ন বা পরিকল্পনারও এমন সাধ্যের স্তর থাকা জরুরি।
-তোমার মতো অতশত ভেবে এদেশে বাঁচা যাবে না। শর্টকাটে কত মানুষ আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে আর তুমি আছো নীতি কথা মারানোর সিঁড়ি নিয়ে।
-আচ্ছা মহামায়া, বুফে মানে জানো?
-এখানে আবার বুফে আসলো কোত্থেকে?
-আহা জানো কী-না তা বলো?
-জানবো না কেন, আমার কপালে কী বেয়াক্কেল লেখা আছে নাকি?
-আচ্ছা মনে করো যে, আমার কপালেই বেয়াক্কেল লেখা আছে, তাহলে এবার তুমি আমাকে বলো বুফে মানে কী?
-বুফে হচ্ছে, খাবারের জন্য ফরাসিদের থেকে ধার করা একটি সংস্কৃতি। এটি গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশি সংস্কৃতির অনেকটাই দখলে নিয়েছে। যদিও এদেশের হোটেল, কনভেনশন হল, পাটি সেন্টারের বুফে’তে নিজেদের সংস্কৃতির আদলে খাবারে ভর্তি সাজানো টেবিল থাকে, যা সর্বজনীন স্থানেই রাখা হয়। ওখান থেকে গ্রাহক বা অতিথিগণ নিজেদের পছন্দ আর চাহিদা মতো খাবার গ্রহণ করেন। যদিও এই ধরনের বুফেতে দাওয়াত পেলেই আমার জামাই সেই সুযোগ হাত ছাড়া করেন না। লোকটা বুফেতে সাজানো সবধরনের খাবার গো-গ্রাসেই গেলেন, আর বাসায় ফিরে অস্বস্তিতে ভুগেন। কী হে মিস্টার বেয়াক্কেল মশাই ঘিলুতে ডুকেছে?
-জি, ডুকেছে। তোমার এই উত্তরের মধ্যেই তুমি সাধ্যের বিষয়টির সুন্দর উপস্থাপন করেছো।
-জানো, একদিন হিরো ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন একটি রেস্তোরাঁয়, তার ছোটভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের খাবারের মেন্যু পছন্দ করার জন্যে।
হিরো ভাই ওখানে গিয়ে ম্যানেজারকে বললেন- আমার হাজার দেড়েক গেস্ট হবে, নিন তালিকার এই আটটি আইটেম হবে। জনপ্রতি প্লেটে কতো খরচ হবে? ম্যানেজার সব হিসেব করে জানালেন ১১ শত টাকা। আর যদি বুফে সিস্টেমে অর্ডার করেন তাহলে সাড়ে ১২ শত টাকায় ৫১ আইটেম পাবেন।
আমি অবাক হয়ে চোখ কপালে তুলতেই ম্যানেজার বললেন, আরে ভাই অবাক হচ্ছেন কেন? আপনি ১৬ শত টাকা করে দিলে আমি ১০১ আইটেম খাবার দেবো। শর্ত হচ্ছে কোনো খাবার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন না। এখানে বসে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে খেতে হবে। আসলে আপনি গুনছেন খাবারের আইটেম সংখ্যা, আর আমরা দেখি গ্রাহকদের পেট। একজন মানুষ যা-ই খাবেন, তিনি যতো খাদক হোক না কেন তার পেটের ধারণ ক্ষমতার বাইরে খেতে পারবেন না। কারণ চোখের সীমা অসীম হলেও পেটের সীমা নির্দ্দিষ্ট আর ওখানেই আমাদের বুফে ব্যবসার মুল রহস্য।
ওই ম্যানেজারের কথায় আমার বোধোদয় হলো- সত্যি মহামায়া, শতটা আইটেম খাবার টেবিলে থাকার পরও মানুষের পেট কিন্তু সীমার অধিক নিতে পারে না। দেখো- সৃষ্টিকর্তাও কিন্তু সীমা লংঘনকারীকে পছন্দ করেন না। তাই আমি মনে করি স্বপ্ন (পরিকল্পনা) দেখারও একটা স্তরজনীত সীমা থাকা জরুরি। শিক্ষা ও খাদ্য গ্রহণের স্তরের মতো করে স্বপ্নকেও স্তরে ফেলে দেখতে পেলে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। কারণ বিধাতা আবার ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন।
-তাহলে যে বলা হয়- মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়?
-মন্দ তো বলেনি, মানুষতো আর আতুড় ঘরে ভূমিষ্ট হয়েই দৌড়ায় না। সময় নিয়ে বেড়ে ওঠে। বেড়ে উঠতে-উঠতে স্বপ্নটাকেও পরিচর্যা করুক, তাহলেই স্বপ্ন-সাফল্যও তার সমান হবেই। এখানে শর্টকাট বড় হওয়ার জায়গা কোথায়? তাছাড়া ভুলে গেলে চলবে না স্বপ্ন মানেই একটি নিচক কল্পনা নয়, স্বপ্ন মানেই বাস্তব, স্বপ্ন মানেই গন্তব্য। আমি কোথায় যেতে চাই তার নাম স্বপ্ন। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হতেই পারে। বাস্তব স্বপ্ন ও চেষ্টা কখনোই ব্যর্থ হয় না। যদি স্বপ্নকে বিশ্বাসে রূপান্তরিত করতে পারা যায় তাহলে তা অর্জনও করা যায়। শর্টকাটের গল্প ওয়ালাদেরটা স্বপ্ন বা পরিকল্পনা হতে পারে না, ওটা পরিষ্কার দুর্নীতি।

* মহামায়া রির্টান *
তানভীর আলাদিনের ‘ উপন্যাস’

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত