
মোঃ সাইদুল ইসলাম, বেনাপোল প্রতিনিধিঃ-বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে আজ রবিবার দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে কোনো প্রভাব পড়েনি। হরতাল ডেকে মাঠে নেই দুই দলের কোনো নেতাকর্মী। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যসহ কাস্টমস ও বন্দরের কার্যক্রম চলছে স্বাভাবিকভাবে। পাসপোর্টযাত্রী চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে।হরতালে খুলনা-বেনাপোল, কলকাতা-খুলনার মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করেছে। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও বেনাপোল থেকে যশোরের মধ্যে সব ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করেছে। ব্যাংক, বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অফিস-আদালত খোলা আছে। বন্দরে কার্যক্রম চলেছে পুরোদমে।
হ্যান্ডলিং শ্রমিকরা বন্দর অভ্যন্তরে পণ্য লোড-আনলোডের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। ভারত থেকে ফেরত আসা বেশ কিছু পাসপোর্টযাত্রী বেনাপোলের বিভিন্ন পরিবহন অফিসে আটকা পড়ে আছেন। সন্ধ্যার পর দূরপাল্লার বাস চলাচল করলে তারা গন্তব্যে চলে যাবেন বলে জানান পরিবহন ম্যানেজাররা। অনেকে বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেল, ভ্যান, রিকশা ও নসিমনে করে গন্তব্যে চলে যেতে দেখা গেছে।
হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে কাউকে পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। বেনাপোল, শার্শা, নাভারন ও বাগআঁচড়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশি টহল দিতে দেখা গেছে। উপজেলায় মাঠে নেই বিএনপি ও জামায়াতের কোনো নেতাকর্ম। অনেকটাই আত্মগোপনে চলে গেছেন তাঁরা। মূলত গ্রেপ্তার এড়াতেই কেউ প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি পালন করতে আসছেন না বলেই বিএনপির নেতাদের দাবি।এসব নেতা মাঠে না থাকায় নেতাকর্মীরা অনেকটা হতাশ। অনেক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, বড় বড় নেতা সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করে চলেন, এ কারণে কোনো আন্দোলন করছেন না এলাকায়। বেনাপোল, শার্শায় হরতাল না হওয়ার ব্যাপারে বিএনপির শার্শা উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান জহির বলেন, বেনাপোল-শার্শায় অবরোধ-হরতাল পালন করা কঠিন ব্যাপার। এখানে হরতাল আহ্বান করলে প্রতিপক্ষ ও পুলিশ জোর প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মূলত সহিংসতা এড়ানোর জন্য আমরা এখানে হরতাল কর্মসূচি এড়িয়ে চলি। শুধু বেনাপোল বন্দর নয়, শার্শা, নাভারণ, বাগআঁচড়ায় আমরা হরতাল পালন করতে পারি না। এখানকার পরিস্থিতি একটু আলাদা।
শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও আমরা হরতালের পক্ষে মাঠে নামতে পারেনি। হরতালের সময় এখানে কাজ হয়েছে। আসলে বেনাপোল বন্দরকে সচল রাখতে অবরোধ-হরতাল থেকে সবাইকে সরে আসতে হবে। অবরোধ-হরতালের কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো ভেঙে পড়ে। বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভূইয়া ও শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এস আকিকুল ইসলাম জানান, হরতালে বেনাপোল বন্দরসহ শার্শা উপজেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ টহল দিচ্ছে। যে দলই বিরোধী দলে থাকুক না কেন, এখানে হরতাল আসলে হয় না বলে আমি জেনেছি। এখানে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলে। কোনো ঝামেলা নেই হরতালের দিনে। নেই কোনো পিকেটিং, মিছিল-সমাবেশ। এ কারণে এখানে নিরাপত্তা নিয়েও কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না আমাদের। বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রেজাউল ইসলাম জানান, হরতালে বেনাপোল কাস্টম হাউস ও চেকপোস্ট কার্গো শাখায় কাজ চলেছে। হরতালে ব্যাংক খোলা থাকায় রাজস্ব আদায়ে কোনো প্রভাব পড়েনি। কাস্টমস কর্মকর্তা ও ক্লিয়ারিং এজেন্টরা স্বাভাবিক কাজকর্ম করেছেন। সকাল থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিকভাবে চলেছে। তিনি বলেন, হরতালে বন্দরে কোনো প্রভাব পড়েনি। সকাল থেকে ভারত থেকে আসা আমদানীকৃত পণ্যবাহী ট্রাক থেকে পণ্য আনলোড ও বাংলাদেশি ট্রাকে পণ্য লোড অব্যাহত আছে। দুপুরের পর থেকে এসব ট্রাক পণ্য নিয়ে বন্দর ত্যাগ করতে শুরু করবে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে এ কারণে বন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ পাসপোর্টযাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে।